সিকিমের একেক দিকের সৌন্দর্য একেক রকম। গরমকালেও সেখানে বেজায় ঠান্ডা। এই সময় সিকিম ঘোরার আনন্দই আলাদা।
যাঁরা বেড়াতে যেতে ভালোবাসেন তাঁদের কাছে সিকিম একটি বেশ পছন্দের স্থান। তবে সিকিম ভ্রমণ মানে বেশিরভাগ পর্যটকের কাছেই উত্তর সিকিম ভ্রমণ।
কিন্তু হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্টো পাহাড়ি রাজ্যেও যে বেশ কয়েকটি অফবিট স্থান রয়েছে তার খোঁজ অনেকেই রাখেন না।
আজকে বরং সেই সব স্থান নিয়ে একটু আলোচনা করা যায়।
রাভাংলা
দক্ষিণ সিকিমের ছোট্টো শহর রাভাংলা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মনে হবে যেন স্বর্গে চলে এসেছেন। মনে হবে এই বুঝি পারিজাতের বাগানে পা পড়বে আপনার। টেনডং এবং মিয়ানাম পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই সুন্দর শহর শান্তিপ্রেমীদের কাছে দারুণ প্রিয়।
এখানকার রেয়ং সানরাইজ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় দেখা কিন্তু মাস্ট। রালাং বৌদ্ধমঠ তো আছেই সঙ্গে রালাং এবং বরং উষ্ণ প্রস্রবন রাভাংলার সৌন্দর্যে বৈচিত্র এনে দিয়েছে।
টেনডং-এ পাবেন ট্রেকিং-এর আনন্দ। শহরের বুদ্ধ পার্কটি ভগবান বুদ্ধের সুন্দর সব মূর্তি দ্বারা সজ্জিত। অক্টোবর থেকে মে মাস রাভাংলা ভ্রমণের সেরা সময়।
গ্যালশিং
গ্যালশিং-এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘রাজার বাগান’। এক সময় এখানে একটি রাজকীয় বাগান ছিল। সেটি ছিল রাবডেন্টসে প্রাসাদের সংলগ্ন। গ্যালশিং-এর খেচেওপালরি হ্রদটি বিখ্যাত।
বলা হয় যে, পরিষ্কার মনে এই হ্রদে গিয়ে প্রার্থনা করলে মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। অষ্টাদশ শতকে নির্মিত পেমায়াংসে মঠ এখানকার বিখ্যাত স্থান।
এখানকার গ্যালশিং বাজারটি একশো বছরেরও পুরোনো। সিকিমের সবচেয়ে বড় এবং পবিত্রতম প্রাচীর ঘেরা বাড়ি মেনডাংএখানকার অন্যতম আকর্ষণ।
কালুক
পশ্চিম সিকিমের কালুক হিমালয় পর্বতের কোলে অবস্থিত এক শান্ত এবং সুন্দর গ্রাম। পায়ে হেঁটে গ্রাম ঘোরা যায়।
সংলগ্ন রিংচেনপোং-তে হেঁটে গেলে সাদা মেঘের দল আপনার শরীর ছুঁয়ে যাবে। অরণ্যের ভিতর দিয়ে মেঘের দলকে ভেসে বেড়াতে দেখবেন।
গ্রামের এই অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য মুগ্ধ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য অসাধারণ।
Tsomgo বা ছাঙ্গু লেক
গ্যাংটক থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সোংমো বা ছাঙ্গু লেক। প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফিট উপরের এই লেকটি একবার চোখের দেখা না দেখলে মিস করবেন।
এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এখানে চমরীগাই বা ইয়াকের পিঠে চড়ে ঘুরতে পারবেন। ছাঙ্গুল লেক যেন সিকিমের পবিত্রতার প্রতীক।
কিংবদন্তি, অতীতে নাকি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ছাঙ্গু লেকের জলের রং দেখে ভবিষ্যত্বাণী করতেন। এখন এই ছাঙ্গু লেকের ধারে গরম গরম চা আর মোমো পাওয়া যায়। বরফে ঢাকা ছাঙ্গু লেকের ধারে বসে গরম গরম খাবার ও পাণীয় সিকিম ভ্রমণকে জমিয়ে দেবে।
বোরং
সিকিমের অন্যতম সুন্দর স্থান হল বোরং গ্রাম। এটি রাজ্যের আদর্শ অফবিট পর্যটনকেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫,৮০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত বোরং গ্রামের ‘বোরং সাচু’ উষ্ণ প্রস্রবণটি দারুণ বিখ্যাত। ট্রেকারদের কাছে এই স্থান অত্যন্ত প্রিয়। তবে খুব কম পর্যটকই এই স্থানের কথা জানেন।
নামচি বা দামথাং ট্রেকিং রুট-এর মধ্যে পড়ে বোরং। এই ট্রেকিং দারুণ রোমাঞ্চকর। বোরং-এর আশপাশে রয়েছে দারুণ সব দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে রয়েছে, ফাটাম গ্রাম, বারমেলি ব্রিজ এবং বোরং বা রালং-এর মতো বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মঠ। বোরং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়ার দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
সুম্বুক
উত্তর-পূর্বের অন্যতম আকর্ষণীয় অথচ অফবিট স্থান হল সিকিমের সুম্বুক। সবুজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীতে পরিপূর্ণ এই শহরটি দুটি ভাগে বিভক্ত। উচ্চ সুম্বুক এবং নিম্ন সুম্বুক।
উচ্চ সুম্বুকের সাজানো বাগান, পাহাড়ি নদী, নদীর তীরে প্রাচীন মন্দির, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবই যেন অনবদ্য।
নিম্ন সুম্বুকের ময়ূর প্রজনন অরণ্যটি যেন মিস করবেন না। এখানে, প্রচুর ময়ূর এবং হর্নবিল দেখতে পাবেন।
Discussion about this post