সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
আইপিএল ২০২৪-এ অপ্রতিরোধ্য কলকাতা নাইট রাইডার্স। কোয়ালিফায়ারে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হেলায় হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পাকা করে ফেলল কেকেআর। ব্যাটে-বলে সব বিভাগেই প্যাট কামিন্সের দলকে দুরমুশ করে ৮ উইকেটে সহজ জয় পায় শ্রেয়স আইয়ারের দল। বোলিং স্টার্ক-চক্রবর্তীদের ক্যারিশ্মা, ব্যাটিং ভেঙ্কটেশ আইয়ারদের তাণ্ডব।
হায়দরাবেদের দেওয়া ১৬০ রানের টার্গেট ৩৮ বল বাকি থাকতেই চেজ করে ফেলে নাইটরা।
ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন প্যাট কামিন্স। সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে যায় সানরাইজার্সের। বড় ম্যাচে জ্বলে ওঠেন মিচেল স্টার্ক। আগুনে স্পেল করেন তিনি। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ট্রেভিড হেড, অভিষেক শর্মা, শাহবাজ আহমেদদের উইকেট নিয়ে হায়দরাবাদের কোমড় ভেঙে দেন অজি স্পিড স্টার। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন তিনি।
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালের স্মৃতি ফেরালেন মিচেল স্টার্ক। সেদিন ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার ব্রেন্ডন ম্যাকালামের স্টাম্প ছিটকে দিয়েছিলেন স্টার্ক। তাতেই দুমড়ে গিয়েছিল কিউয়িদের মনোবল। আর এদিন আইপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে, স্টার্কের দ্বিতীয় বলে ইয়র্কার ছিল না।
বলটা শেষ মুহূর্তে সুইং করল, লাইন মিস করে বোল্ড হলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিধ্বংসী ওপেনার ট্রাভিস হেড। তাতেই দেওয়াল লিখনটা স্পষ্ট হয়ে যায় ফাইনালে কোন দল যেতে চলেছে!
প্রথম ওভারে স্টার্ককে সুইং পেতে দেখে, পাওয়ার প্লে'তে তিন ওভার করালেন শ্রেয়স আইয়ার। তাঁর চালটা কাজে দিল। তৃতীয় ওভারে স্টার্ক পরপর দু'বলে নিলেন দু'উইকেট। স্টার্কের আগুনে স্পেলের (৩-০-২৩-৩) ঝটকায় ভাঙল এবারের আইপিএলের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদণ্ড। এতদিন স্টার্কের যারা সমালোচনা করেছিলেন, তাঁদের মুখেই অজি পেসারের বন্দনা। সবাই লিখলেন, 'এই জন্যই স্টার্ক বড় ম্যাচের খেলোয়াড়।
এদিন টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে কী ভুল করলেন প্যাট কামিন্স। গত ১৯ নভেম্বর ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে বাজিমাত করেছিলেন প্যাট কামিন্স। এদিন আর হলো না! তিনি ভাবতেই পারেননি স্টার্কের হাত থেকে এভাবে গোলাগুলি বেরোবে!
মাঝে হেনরিক ক্লাসেন ও রাহুল ত্রিপাঠী ব্যাটে কিছুটা ম্যাচে ফেরে সানরাইজার্স। দুই তারকা ব্যাটার মিলে বেশ কিছু অনবদ্য শট খেলেন। অর্ধশতরানের পার্টনারশিপ করেন তারা। অর্ধশতরান করেন তিনি। কিন্তু ত্রিপাঠী ৫৫ রানের ইনিংস খেলে রানআউট ওহেনরিক ক্লাসেন ৩২ রানে আউট হতেই ফের ধস নামে। শেষের দিকে হায়দরাবাদকে কিছুটা টানেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ৩০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলের স্কোর ১৫০ পার করেন। শেষ পর্যন্ত ১৫৯ রান করে এসআরএইচ।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল করেন কেকেআরের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও সুনীল নারিন। ফিল সল্টের জায়গা মরশুমে প্রথম ওপেনিং করতে নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন গুরবাজ। ৩ ওভারেই ৪৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ২৩ রান করে আউট হন আফগান তারকা। সুনীল নারিন আউট হন ২১ রান করে। কিন্তু তাদের ঝড়ো ব্যাটিং দলের জয়ের ভিত তৈরি করে দেয়।
এরপর ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও শ্রেয়স আইয়ার মিলে দলের স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যান। ঠান্ডা মাথায় আক্রমণাত্মক শট খেলতে থাকেন দুই তারকা। অর্ধশতরানের পার্টনারশিপ গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে দেন। ২৮ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। ২৩বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন কেকেআর অধিনায়ক। মাত্র ১৩.৪ ওভারে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। ২৪ বলে ৫৮ করে শ্রেয়স ও ২৮ বলে ৫১ রান করে ভেঙ্কটেশ আইয়ার অপরাজিত থাকেন।
আগামী ২৬ মে আইপিএলের ইতিহাসে চতুর্থবার ফাইনাল খেলতে নামবে কেকেআর। ২০২১ সালের পর ফের ফাইনালে শাহরুখের দল। এই দলটার যারা সমর্থক, তাঁরা তৃতীয় ট্রফির স্বপ্ন দেখতে পারেন। দশদিন পর ম্যাচ খেলতে নেমে, একইরকম ধারাবাহিকতা নাইটদের। সানরাইজার্সের মতো দলের বিরুদ্ধে নির্মম পারফরম্যান্সের করে বুঝিয়ে দিল 'কেকেআর হে তেইয়ার' খেতাব জেতার জন্য।